সোমবার, ৬ মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মাতৃসম রেলি ওয়েনারের মৃত্যু

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু :   |   বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

মাতৃসম রেলি ওয়েনারের মৃত্যু

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আমার এবারের অ্যালামনাই রিইউনিয়নে আনন্দের উপভোগের পাশাপাশি বিষাদের ঘটনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়াশোনার সময়ে জন, এস, নাইট জার্নালিজম ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েট রেলি ওয়েনারের (Relly Weiner) মৃত্যুর খবর। রিইউনিয়ন শুরু হয় ১২ জুলাই, রেলি মারা গেছেন ৯ জুলাই।

মৃত্যুর আগে তিনি তেমন অসুস্থ ছিলেন না। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। আমি ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার পর থেকে রেলি ওয়েনার আমার ঘনিষ্ট জনে পরিণত হয়েছিলেন। রেলি ওই বছরই ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফেলোশিপ প্রোগ্রামের সঙ্গে ছিলেন। এর আগে তিনি স্ট্যানফোর্ডেই ইকনমিকস ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি ছিলেন।


আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌছলে আমেরিকান সংস্কৃতিতে খাপ খাওয়াতে আমার যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য তিনি প্রথমে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। পরে আমার স্ত্রী এসে পৌছলে, তাকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের এক সকালে আমাকে স্যান ফ্রান্সিসকো এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করেন প্রোগ্রামের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হ্যারি এন প্রেস এবং এল কামিনো রিয়েল এর এক মোটেলে প্রথম রাত কাটানোর পর রেখে আসেন উইলবার হল নামে স্ট্যানফোর্ডের ছাত্রাবাসে। সামারের ভ্যাকেশন চলছিল বলে হলে খাবার ব্যবস্থা ছিল না। দূরে ট্রেসিডার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ের ক্যান্টিনে এসে অধিক দামে অরুচিকর আমেরিকান খাবার খেতে হতো। রেলি ওয়েনারকে আমার প্রতিদিনের দুরবস্থা সম্পর্কে বলতাম। দশদিন পর তিনি আমাকে প্রস্তাব দিলেন, আমার অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছে করলে আমি তার বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারি এবং আমার দেশীয় খাবার রান্না করতে খেতে পারি। ভাতের অভাবে আমি প্রায় না খেয়েই কাটাচ্ছিলাম। অতএব, রান্না করতে পারবো জেনে উৎসাহের সঙ্গে রাজি হয়েছিলাম।


রেলিই উইলবার হল থেকে তার গাড়িতে তুলে প্রথমে এক গ্রোসারিতে নিয়ে আমাকে চাল,ডাল তেল, নুন কিনতে সহায়তা করেন। বাড়ি পৌঁছে আমার জন্য রুম গুছিয়ে দেন। রুমটি তার মেয়ের। তিন বেডরুমের বাড়ির এক রুমে রেলি নিজে থাকেন। অন্য এক রুমে থাকে স্ট্যানফোর্ডের গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট অষ্ট্রেলিয়ার ডেভিড। রেলির‌ মেয়ে স্যান ফ্রান্সিসকোতে পড়াশোনা করে। তার অনুপস্থিতিতে খালি পড়ে থাকে রুমটি। রেলির‌ বাড়ি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাইল তিনেক দূর্। গাছপালায় ঢাকা সবুজ মনোরম পরিবেশ। যাতায়াত করতে হবে রেলির সঙ্গে। আমার ক্লাস আগে শেষ হলে রেলির‌ সঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য তার অপেক্ষা করতে হবে অথবা হেঁটে ফিরতে হবে।

রেলি ওয়েনার। বুলগেরীয় বংশোদ্ভুত ইহুদি। জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়ায়। পঞ্চাশোর্ধ বয়স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার লগ্নে হিটলারের জার্মানিতে যখন ইহুদি পীড়ন শুরু হয় তখন তার পিতা জার্মানিতেই মিলিশিয়া হিসেবে কাজ করতেন। তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন বুলগেরিয়াতেও ইহুদিরা নিরাপদে থাকতে পারবে না। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ১৯৩৯ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকার উদ্দেশে। রেলির বয়স তখন চার বছর। তারা এসে ওঠেন স্যান ফ্রান্সিসকোতে। রেলির বাবা-মা এক সময় পালো আল্টোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বছর চারেক আগে র‌্যালির মা গেছেন। তার বাবা থাকেন এক ওল্ড এইজ হোমে। তাঁর বয়স পঁচাশি বছর।


দুই ছেলেমেয়ে রেলির (ছেলে বেশ কয়েকবছর আগে মারা গেছে)। এরা র‌্যালির প্রথম স্বামীর সন্তান। দ্বিতীয় স্বামী পিস কোরের ভলান্টিয়ার হিসেবে কোস্টারিকায় কর্মরত। এই স্বামীর সঙ্গেও রেলির সম্পর্ক ছিল কিনা তার সঙ্গে আলোচনায় মনে হয়নি। ছেলেমেয়েরা বাড়িতে আসে কিনা জানতে চাইলে রেলি বলেছিলেন, “ওরা এডাল্ট। বাবা-মা’র চেয়ে বয়ফ্রেণ্ড বা গার্লফ্রেণ্ড অধিক প্রিয়। তবে, অর্থের প্রয়োজন হলেই ফোন করবে বা চলে আসবে।”

বেশ জমে ওঠেছিল রেলির সঙ্গে। প্রতিদিন সকালে তার গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাই। ব্যতিক্রম ছাড়া একসঙ্গে বাড়ি ফিরি। সন্ধ্যায় দু’জন দু’জনের রান্না সারি। ডেভিড রাতে রান্না করে না। দুধে মিশিয়ে সিরিয়াল খায়। তিন জন ডাইনিং টেবিলে বসে যার যার খাবার খাই। নিজ নিজ দেশের সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ করি। রেলির সংস্কৃতি মিশ্র, অভিজ্ঞতাও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বুলগেরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করতেন। কয়েক বছর আগে একবার বুলগেরিয়ায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন তার এক চাচা ও কাজিনদের সঙ্গে। আরেক চাচার পরিবার তুরস্কে। খালাদের একজন থাকেন ইসরাইলে। আরেকজন আর্জেন্টিনায়। সম্প্রসারিত পরিবারের বিশিষ্ট লোকদের নিয়ে একটা রিইউনিয়ন করার ভাবনা কথা বলেছিলেন রেলি। জন্মসূত্রে ইহুদি হলেও তিনি আদৌ ধার্মিক নন, নাস্তিক। পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ছাড়া মেরির গর্ভে যিশুর জন্ম কাহিনি নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন। ইসলামকে জানেন গোঁড়া ও উগ্রপন্থীদের ধর্ম বলে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বেশ পড়াশোনা করেন। তার মতে এদেশে ধর্ম মানে মিষ্টিসিজম – ইশ্বরের সঙ্গে মানুষের প্রত্যক্ষ যোগসূত্র। ধর্ম কেবল প্রাকটিস করার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।

এক রাতে রেলি বলেন, “কাল সকালে আমার ড্যাড আসবে। বেল বাজলে দরজাটা খুলে দিয়ো।”
জানতে চাই,“ কতদূরে থাকেন তোমার ড্যাড?”
“এই তো কাছেই একটা ওল্ড এইজ হোমে।”
তোমার বাড়িতে এনে রাখলেই পারো।”
“ড্যাড তা পছন্দ করবে না। আমারই বা কী প্রয়োজন তাঁর স্বাধীনতায় নাক গলানোর।”
“তুমি কি চাও না যে তুমি বুড়ো হলে তোমার ছেলেমেয়েরা তোমার কাছে থাকুক?”
“নো, নেভার। আই হেইট ইট। আমাদের সমাজে কেউ তা পছন্দ করে না। কেউ কারও বোঝা হতে চায় না।”
“বুড়ো বাপটার প্রতি কোনো দায়িত্বই কি তুমি অনুভব করো না?”
“আমার ড্যাড তাঁর সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তাঁর কাজের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর জীবনে ও বার্ধক্যে তাঁর দেখভাল ও পরিচর্যার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমি বড়জোর খোঁজখবর নিতে পারি রাষ্ট্র তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে কিনা।”
“তুমি বুড়ো হলে সন্তানদের নৈকট্য পেতে তোমার বুকটা কি হাহাকার করবে না?”
“তা হয়তো করবে। কিন্তু আমার পক্ষে তো সমাজটাকে পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়। আমার অনুভূতি তো আর আমার সন্তানরা অনুভব করবে না।”
“আমার দেশে সন্তানরা বৃদ্ধ বাবা-মা’র দায়িত্ব পালন না করলে সেটা সোস্যাল ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে।”
“তোমাদের দেশে সন্তান জন্মদানের তত্ত্বটাই আমাদের থেকে ভিন্ন। অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তোমাদের দরিদ্র পিতারা সন্তান জন্ম দেয়, যাতে পারিবারিক আয় বাড়ে এবং বুড়োদের দায়িত্ব নিতে পারে। আমাদের রাষ্ট্রের এখতিয়ার সর্বব্যাপী। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রই মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে।”
“কমিউনিজমের পদ্ধতি থেকে তোমাদের পার্থক্য তাহলে কোথায়?”
“পার্থক্য থিয়োরি এণ্ড প্রাকটিসে। ওয়েলেফেয়ার মানেই রেষ্ট্রিক্টেড ওয়েলফেয়ার।”
প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমরা মত বিনিময়, তর্ক -বতর্ক করি। রেলি বলতেন, “ আমেরিকায়ও কিছু পরিবারের প্রবীণরা সন্তানদের সাথেই থাকে, ওল্ড এজ হোমে যায় না।” তারই এক বান্ধবী বারবারা’র মাম্মি মেয়েদের মেয়েদের সাথেই কাটিয়েছেন। বৃদ্ধা মাম্মির মেজাজ খুব রুক্ষ ছিল। সেবা যত্নে ঘাটতি পড়লেই তুলকালাম কাণ্ড বাঁধাতেন। বারবারা নীরবে মাম্মির সেবা করতো। পার্টিতে যেত না। উইকএণ্ডেও বেড়াতে না গিয়ে মায়ের পাশেই কাটিয়ে দিতো। রেলির মতে আমেরিকান সমাজে এটা সাধারণত হয় না। মাম্মির মৃত্যুর মুহূর্তেও বারবারা তার কানে কানে বলেছে, “আই লাভ ইউ মাম্মি। আই উইল মিস ইউ।” বারবারা খুব কেঁদেছে মাম্মির মৃত্যুতে।

নির্ধারিত সকালে রেলির দীর্ঘদেহী ড্যাড আসেন। বয়স পঁচাশি হলেও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ঘরে প্রবেশ করলে রেলি পরিচয় করিয়ে দেন আমার সাথে। বুড়োর হাতে একটি টুল বক্স ছিল। বাথরুমে টুকটাক ফিটিংসয়ের কাজ। পেশাদার প্লাম্বারকে ডাকলে অনেক মজুরি দিতে হতো। তাই প্লাম্বার না ডেকে ড্যাডকে অনুরোধ করেছেন কাজটা সেরে দিতে। কাজ শেষ হলে ড্যাডকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করলেন রেলি। ঠাণ্ডা দুধ, সিরিয়াল, দুধ চিনি ছাড়া গরম চা। ব্রেকফাস্ট সেরে বুড়ো তার অ্যান্টিক গাড়িটা চালিয়ে চলে যান।

র‌্যালির বাড়িতে প্রথম শনি ও রোববার শনিবার নিরানন্দ কাটে। শনিবার সকালে ওঠেই রেলি বলেন যে তিনি তার ফ্রেণ্ডের সঙ্গে দিনটা কাটাবেন। ডেভিডও এ দু’দিন থাকবে তার গার্লফ্রেণ্ডের সঙ্গে। সারা দিন আমাকে একা কাটাতে হবে। ইচ্ছে করলে এদিক-ওদিক ঘুরে কিছু সময় কাটাতে পারি। রেলি আমাকে একটি ম্যাপ দিয়ে হাঁটা দূরত্বের মধ্যে কোথায় পার্ক, শপিং সেন্টার, সুইমিং পুল, সিনেমা হল ইত্যাদি মার্ক করে দিয়েছিলেন লাল কালিতে। তাকে বিদায় দিয়ে আমি বের সময় দেখি, প্রধান দরজা খোলা। তালা লাগানোর ব্যবস্থা নেই। কেউ ঘরে না থাকলেও খোলা থাকে। প্রথম দিন ভেবেছিলাম, রাতের বেলায় নিশ্চয়ই রেলি দরজা বন্ধ রাখে। কিন্তু সকালে হা করে খোলা দরজা দেখে নাশতার টেবিলে রেলিকে বিষয়টি বললে তিনি শব্দ করে হেসে বলেছিলেন, “দীর্ঘ ছুটিতে দূরে কোথাও না গেলে দরজা বন্ধ কী খোলা থাকলো তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। আমার ঘরে যা আছে তা তো এদেশের সবারই আছে। কে কারটা নিতে আসবে। তাছাড়া চোর-ডাকাত আসে নগদ অর্থ, গহনাপত্র নিতে। বাড়িতে নগদ অর্থ খুব কম লোকেরই থাকে। চেক বা ক্রেডিট কার্ডে সব চলে। একশ’ ডলারের নোট তো আমাদের হাতেই আসে না।”

এলাকায় চুরি সম্পর্কে একটি ঘটনা বলেছিলেন রেলি। তার ছেলের বয়স আট কী নয় বছর। একদিন বিকেলে খেলার মাঠ থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে এসেছে। কাছেই এক বাড়িতে বাড়িতে চোর ঢুকে নাকি তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়েছে। এটা নিতে চায়, ওটা ধরে টানাটানি করে। পরে জানা গেল লোকটা পেশাদার চোর নয়। প্রচুর মদ গিলে মাতাল অবস্থায় বাড়িটায় ঢুকে পড়েছিল।

রেলির বাড়িতে থাকার সময় এক শনিবার তিনি আমাকে পালো আল্টোর এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে নিযৈ যান লাঞ্চ করাতে। রেলিই বিল পরিশোধ করেন। ইহুদি হলেও রেলির শেক্সপিয়রের শাইলক চরিত্রের মতো কৃপণ ছিলেন না। লাঞ্চ সেরে আমরা ক্যাম্পাসে আসি। ছুটির দিনে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। সেদিনও ছিল। সহসা এক দম্পতির ওপর আমার চোখ পড়ে। সঙ্গে পাঁচ-ছয় বছরের একটি মেয়ে। উপমহাদেশীয় চেহারা। চোখাচোখি হতেই এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই ভদ্রলোকের দিকে,
“আর ইউ ফ্রম পাকিস্তান?”
“নো, আই অ্যাম ফ্রম ইন্ডিয়া, এণ্ড হোয়াট অ্যাবাউট ইউ?”
“আই অ্যাম ফ্রম বাংলাদেশ।”
“বাংলাদেশ! তার মানে আপনি বাঙালি! তাহলে তো আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি।”

আমেরিকায় আসার পর এই প্রথম কারও মুখে বাংলা শুনছি। ভদ্রলোকের নাম মনোজ ভট্টাচার্য। স্ত্রী স্বাতী ভট্টাচার্য, মেয়ে কল্পা। পশ্চিমবঙ্গের মালদহে বাড়ি। আট বছর ধরে আমেরিকায় আছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন পিটসবুর্গে। ক্যালিফোর্নিয়ায় হিউলেট পেকার্ডে চাকুরি করছেন। মাইল দশেক দূরে কুপারটিনোতে থাকেন। খাওয়া নিয়ে আমার দুর্দশা দেখে রেলি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেছে, আমার খাবার রান্নার জন্য তার হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, তার রেফ্রিজারেটরে আমার পাকানো ভাত-মাংস রাখছি এবং তিনি আমাকে সকাল-বিকাল রাইড দিচ্ছেন – এসব শুনে মনোজ বাবু বিস্মিত হলেন। আমেরিকানরা লোকজনকে খাতির করলেও এতটা করে না। রেলি কাছেই ছিলেন। ডেকে মনোজ বাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। আমি নিজের ভাষায় কথা বলার মানুষ পেয়েছি দেখে র‌্যালি আমার চেয়ে বেশি আনন্দিত হন।
রেলির বাড়িতে থাকার সময়ের মধ্যেই ক্যাম্পাস অ্যাপার্টমেন্টের বরাদ্দ পাই এবং রেলির বাড়ি থেকে অ্যাপার্টমেন্টে পৌছে দেওয়ার জন্য নিতে আসেন আমার ব্যাচমেন্ট ডেনভার পোস্টের এডিটোরিয়াল কার্টুনিস্ট মাইকেল কিফি (২০১১ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী)। রেলির বাড়িতে দিনগুলো আনন্দে কেটেছে। একাকীত্ব অনুভব করিনি। আমি চলে যাচ্ছি, রেলির চোখ ছলছল করছিল। গাড়িতে ওঠার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতে রেলিকে কী বলবো ভাবছিলাম। সে সুযোগ না দিয়ে রেলি আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন। বললেন, “হাউ ডু ইউ ফিল হোয়েন ইউ লিভ অ্যা ফ্যামিলিয়ার এনভায়রনমেন্ট?”
দাসপ্রথা বিরোধী সিভিল রাইটস মুভমেন্টের সময়ের জনপ্রিয় গানের লাইন উচ্চারণ করলাম, “আই ফিল লাইক অ্যা মাদারলেস চাইল্ড।”

আমার চোখও ভিজে ওঠেছিল।

Posted ৩:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(650 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.